খেলাধুলা

প্রোটিয়া বোলারদের উপর স্টিম রোলার চালিয়েছেন তিলক এবং স্যামসন।

প্রোটিয়া বোলারদের উপর স্টিম রোলার চালিয়েছেন তিলক এবং স্যামসন।

প্রকাশিত : ১৬ নভেম্বর ২০২৪, দুপুর ১২:১৩ আপডেট : ১৬ নভেম্বর ২০২৪, দুপুর ১২:৪২

চার ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজের  স্যামসন এবং তিলক ভার্মার চরম আগ্রাসী সেঞ্চুরির সুবাদে প্রোটিয়াদের ১৩৫ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছে টিম ইন্ডিয়া। এই জয়ের ফলে সিরিজটাও জিতে নিয়েছে ৩-১ ব্যবধানে। 

প্রোটিয়া বোলারদের উপর স্টিম রোলার চালিয়েছেন তিলক এবং স্যামসন। 

জোহানেসবার্গের দ্যা ওয়ান্ডারার্স স্টেডিয়ামে টসে জিতে আগে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। ব্যাটিংয়ে নেমেই ধুমধাড়াক্কা পিটুনি শুরু করেন ভারতের দুই ওপেনার অভিষেক শর্মা এবং সাঞ্জু স্যামসন। প্রোটিয়া বোলারদের পিটিয়ে তক্ত বানিয়ে দলের বোর্ডে রান তুলতে থাকেন দুজন। পাওয়ারপ্লেটা দারুণ কাটিয়েছে ভারত। উদ্বোধনী জুটিতে রান আসে ৭৩। ১৮ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেন অভিষেক। পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারে অভিষেকের উইকেট হারিয়ে ৭৩ রান তোলে টিম ইন্ডিয়া।

পাওয়ারপ্লের পরে যেন শুরু হয় আসল ধ্বংসযজ্ঞ। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের কচুকাটা করে রান তুলতে থাকেন স্যামসন এবং তিলক ভার্মা। দুই ব্যাটারের সামনে যেন পাত্তাই পাচ্ছিলেন না প্রোটিয়া বোলাররা। ধুমধাড়াক্কা ব্যাটিংয়ে দারুণ সব শটে রান তুলতে থাকেন স্যামসন-তিলক। অনায়াসেই ফিফটি পেরিয়ে যান দুজন।

টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি, এমন উল্লাস তো তিলককেই মানায়। 

ফিফটির পরেও তাণ্ডব চলেছে। অনেক চেষ্টা করেও তাদের থামানো যায়নি। চরম আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে বাউন্ডারির ফুলঝুরি ছুটিয়ে রান তুলতে থাকেন দুজন। মনে হচ্ছিল যেন ভিডিও গেমস চলছে জোহানেসবার্গের মাঠে। ভিডিও গেমসের মত ব্যাটিংয়ে দলকে বড় পুঁজির দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন স্যামসন এবং তিলক। নিজেরাও চলে যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির অনেক কাছে।

শেষমেশ দারুণ কার্যকরী ব্যাটিংয়ে সেঞ্চুরি ছুঁয়েছেন দুজনই। আগে ছুঁয়েছেন স্যামসন, তার লেগেছে ৫১ বল। অন্যদিকে তিলক ছিলেন একটু বেশি মারমুখি। ৪১ বলেই ছুঁয়ে ফেলেন সেঞ্চুরি, স্বাদ পান আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির। এমন কীর্তিতে দ্বিতীয় ভারতীয় তিলক, প্রথমজন তারই সঙ্গী স্যামসন।

৫ ম্যাচের মধ্যে স্যামসন পেলেন ৩য় সেঞ্চুরির দেখা। 

সেঞ্চুরি ছুঁয়েও ধুন্ধুমার ব্যাটিং অব্যাহত রেখেছেন তিলক। ভারতও তুলে ফেলেছে প্রায় এভারেস্টসম এক সংগ্রহ। নির্ধারিত ২০ ওভারের খেলা শেষে ১ উইকেট হারিয়ে ২৮৩ রানের পুঁজি দাঁড় করায় টিম ইন্ডিয়া। ৪৭ বলে ১২০ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন তিলক। অন্যদিকে ৫৬ বলে ১০৯ রান করে ক্রিজে টিকে ছিলেন স্যামসন। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটি থেকে রান এসেছে ২১০, মাত্র ৮৫ বলে।

দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে ১ উইকেট নেন লুঠো সিপামলা।

বিশাল লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার শুরুটা হয়েছে জঘন্য। দলের ১ রানের মাথাতে প্রথম ওভারেই সাজঘরে ফিরেছেন ওপেনার রেজা হেনড্রিক্স। ২ বল খেলে রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন তিনি। পরের ওভারে ফিরেছেন আরেক ওপেনার রায়ান রিকেলটনও। ৬ বলে ১ রান করেন তিনি। দলের ১ রানের মাথাতেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে বসে দক্ষিণ আফ্রিকা।

শুরুতেই প্রোটিয়া ব্যাটারদের চাপে ফেলে দেন ভারতীয় ব্যাটাররা। 

তিনে নামা অধিনায়ক এইডেন মারক্রামও অবশ্য সুবিধা করতে পারেননি। ৮ বলে ৮ রান করে বিদায় নিয়েছেন তৃতীয় ওভারে। প্রথম তিন ওভারের প্রতিটিতেই একটি করে উইকেট হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা, আউট হন শীর্ষ তিন ব্যাটার, একজনও ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্কের কোটা। মারক্রাম আউট হওয়ার পরের বলে আউট হয়েছেন বিপদজনক হেইনরিখ ক্লাসেন। গোল্ডেন ডাক মেরে সাজঘরে ফিরে যান তিনি। মাত্র ১০ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে যেন ম্যাচ থেকে একরকম ছিটকেই যায় দক্ষিণ আফ্রিকা।

পাওয়ারপ্লের ৬ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ৩০ রান তোলে দক্ষিণ আফ্রিকা। ৫ম উইকেটে একটি ভালো জুটি গড়েন ত্রিস্টান স্টাবস এবং ডেভিড মিলার। দুজনের লড়াকু ব্যাটিংয়ের সুবাদে কিছু রান উঠেছে দলের বোর্ডে।

৫ম উইকেটে মিলার এবং স্টাবস মিলে যোগ করেন ৮৬ রান, ৫৪ বলে। দলের ৯৬ রানের মাথায় আউট হন ২৭ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলা মিলার। ১২তম ওভারের শেষ বলে আউট হন মিলার। ঠিক তার পরের বল অর্থাৎ ১৩তম ওভারের প্রথম বলে আউট হয়েছেন স্টাবস। সাজঘরে ফেরার আগে ২৯ বলে ৪৩ রানের ইনিংস খেলেন স্টাবস।

সিরিজ জিতেছে ভারত। 

দুই সেটা ব্যাটারকে হারানোর পর ধুঁকতে ধুঁকতে এগিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস। মার্কো ইয়ানসেন এক প্রান্তে কিছুটা লড়াই চালিয়েছেন। তবে জয়ের জন্য যথেষ্ট হওয়ার ধারেকাছেও ছিল না তা। ১৮.২ ওভারে ১৪৮ রান তুলে অলআউট হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, ম্যাচটা ১৩৫ রানে জিতে নিয়েছে ভারত। ১২ বলে ২৯ রান করে শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন ইয়ানসেন। 

ভারতের হয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন আরশদীপ সিং। এছাড়া ২টি করে উইকেট নেন বরুণ চক্রবর্তী এবং অক্ষর প্যাটেল। ১টি করে উইকেট শিকার করেন রামানদ্বীপ সিং, হার্দিক পান্ডিয়া এবং রবি বিষ্ণই। 

এই জয়ের ফলে ৩-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতল টিম ইন্ডিয়া