কৃষি

কিশোরগঞ্জের হাওরে বোরো ধান কাটার উৎসব

কিশোরগঞ্জের হাওরে বোরো ধান কাটার উৎসব

ছবি : সংগৃহীত


প্রকাশিত : ২১ এপ্রিল ২০২৫, সন্ধ্যা ৮:১০

কিশোরগঞ্জের হাওরে চলছে সোনালি ফসল ঘরে তোলার মহোৎসব। করিমগঞ্জ ও নিকলী উপজেলাজুড়ে বিস্তৃত বড় হাওরসহ জয়কা, গুণধর, উরদীঘি, এলংজুরী, বড়িবাড়ী, সোহেলা—সবখানেই দেখা গেছে কিষান-কিষানিদের ব্যস্ত কর্মযজ্ঞ। কেউ ধান কাটছেন, কেউ ধান সড়কের পাশে স্তূপ করছেন, কেউ বা মেশিনে মাড়াই করছেন। আবার কেউ রোদে শুকাচ্ছেন, কেউ সেদ্ধ করছেন, অনেকে বাজারে বিক্রির জন্য ধান বস্তাবন্দী করছেন।

খেতের পর খেতে শুধু ধান আর ধান। বৈশাখ মাসের শুরু থেকে পুরোদমে শুরু হয়েছে বোরো ধান কাটা। সকালে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে কাঁচি হাতে কৃষকদের নিরলস পরিশ্রম। হাওরের প্রতিটি কোণজুড়ে যেন ধান কাটার উৎসব।

নেত্রকোনা, সুসং দুর্গাপুরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা শ্রমিকরা চুক্তিতে ধান কাটছেন। কেউ মেশিনে, কেউ কাস্তে হাতে। তবে শ্রমিকরা বলছেন, মেশিনের প্রসারে তাঁদের চাহিদা কিছুটা কমেছে। জমির মালিকদেরও অনুভূতি—ফলন ভালো হলেও বাজারদর নিয়ে চিন্তিত সবাই।

করিমগঞ্জের কৃষক রমজান মিয়া বলেন, ১০ কানি জমির ধান কাটা ও মাড়াইয়ের পরও তাঁর লাভ থাকছে না। প্রতি মণ ধান উৎপাদনে খরচ পড়ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, অথচ বিক্রি করতে পারছেন ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায়। নিকলীর সেলিম মিয়া এবং সুরুজ মিয়ারাও একই হতাশা শেয়ার করেছেন। তারা বলছেন, ধানের ন্যায্যমূল্য না পেলে কষ্টের ফসলের প্রকৃত সুফল মিলবে না।

অন্যদিকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এবার জেলার ১৩ উপজেলায় ১ লাখ ৬৮ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে ধান আবাদ হয়েছে। চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ লাখ ৮৮ হাজার টন। কিশোরগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. সাদিকুর রহমান জানিয়েছেন, বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে পাকা ধান দ্রুত কাটার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল ক্ষতির ঝুঁকি না থাকে।

সব মিলিয়ে কিশোরগঞ্জের হাওরে এখন যেন সোনালি শিষের উৎসব। শুধু ফসল নয়, কৃষকের মুখেও যেন হাসি ফোটে—এমনটাই প্রত্যাশা সবার।