বাংলাদেশের বাণিজ্যিক আম উৎপাদনের অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত নওগাঁর বরেন্দ্র অঞ্চল। এ অঞ্চলের সুস্বাদু আম জৈষ্ঠ্যমাস এলেই দেশজুড়ে আমপ্রেমীদের মুখে হাসি ফোটায়। তবে চলতি মৌসুমে চিত্রটা ভিন্ন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলেও এখন তীব্র খরায় বিপাকে পড়েছেন চাষিরা। গরমে ঝরে পড়ছে গাছে থাকা আম, এতে মাথায় হাত পড়েছে বাগান মালিকদের। আমের বোঁটা লাল হয়ে ঝরে পড়ার হার বাড়ায় আশঙ্কা করা হচ্ছে সম্ভাব্য ফলন বিপর্যয়ের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, চলতি মৌসুমে জেলার ১১টি উপজেলায় ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলা উপজেলায় সবচেয়ে বেশি আম বাগান রয়েছে, যা মোট বাগানের ৭০ শতাংশ। চলতি মৌসুমে প্রায় ৪ লাখ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
আম্রপালি, বারি-৪, কাটিমন, ল্যাংড়া, হিমসাগর, ক্ষীরসাপাত, আশ্বিনা ও গুটি জাতের আম ছাড়াও জেলার আম ভারতে ও ইউরোপে রপ্তানি হয় প্রতি বছর। এর মধ্যে আম্রপালি জাতের আমের কদর সবচেয়ে বেশি।
স্থানীয় আম চাষি রুহুল আমিন ও আবদুল্লাহ সেলিম জানান, কয়েক সপ্তাহ ধরে খরার কারণে বাগানগুলোতে সেচ দেওয়া দুরূহ হয়ে উঠেছে। এতে গাছ থেকে প্রচুর আম ঝরে পড়ছে। তারা বলেন, খরায় শুধু আম নয়, মনোবলও ঝরে পড়ছে।
সাপাহারের চাষি কোরবান আলী প্রামাণিক জানান, গাছে পানি স্প্রে করে কোনোভাবে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা চলছে। তবে সাম্প্রতিক হালকা বৃষ্টিতে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে।
অন্যদিকে কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, খরায় আম ঝরে পড়লেও তা বড় কোনো ক্ষতির কারণ হবে না। এ বিষয়ে নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ঝরে পড়ার পরও যে আম থাকবে, তার মান ভালো হবে। কারণ আম ইতোমধ্যেই মটর দানায় পরিণত হয়েছে। তবে কৃষকদের নিয়মিত সেচ ও কীটনাশক ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, এবারের ফলন গত বছরের তুলনায় বেশি হতে পারে, যদি বৃষ্টির দেখা পাওয়া যায় এবং রোগবালাই দমন করা সম্ভব হয়।
এখন আমচাষিদের চোখ আকাশের দিকে। বৃষ্টি হলে তবেই তাদের স্বপ্নগুলো মুকুলের মতোই ফল হয়ে ধরা দেবে।
মতামত