ছবি : গ্রাফিক্স
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে লালমনিরহাট-১ (হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম) আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন প্রবাসী ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক শিহাব আহমেদ। শুধু রাজনীতি নয়, তাঁর জীবনই অনুপ্রেরণার গল্প- সবজি বিক্রেতা থেকে আন্তর্জাতিক ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার গল্প।
দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই
শৈশব থেকেই দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই করেছেন লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার বড়খাতার সন্তান শিহাব আহমেদ। কখনো রিকশা চালিয়ে, কখনো সবজি বিক্রি কিংবা ট্রাকের হেলপার হিসেবে কাজ করে চালিয়েছেন নিজের পড়াশোনা। মাত্র দুই বছর বয়সে মাকে হারিয়ে আরও কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে।
দারিদ্র্যের নানা বাধা পেরিয়ে ২০১৪ সালে বড়খাতা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস অর্জন করেন তিনি। পরে কারমাইকেল কলেজ থেকে এইচএসসি শেষ করে তুরস্ক সরকারের বৃত্তি নিয়ে গেবজে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগে।
বিদেশে সংগ্রাম ও ব্যবসায়িক সাফল্য
বিদেশে গিয়েও থেমে থাকেননি শিহাব। নিজের খরচ চালাতে কখনো নির্মাণশ্রমিক, কখনো রেস্টুরেন্টে ডিশওয়াশার, আবার কখনো জুতা পালিশের মতো কাজ করেছেন। এভাবেই টিকে থেকে পড়াশোনার পাশাপাশি ২০১৮ সালে শুরু করেন মোবাইল এক্সেসরিজ ব্যবসা। ধীরে ধীরে ব্যবসার পরিধি ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশ, তুরস্ক, দুবাই ও আফ্রিকায়।
বর্তমানে তুরস্কে ‘দ্যা অটোম্যান গ্রুপ’-এর মাধ্যমে রিয়েল এস্টেট, কনস্ট্রাকশন, ট্যুরিজম ও রেস্টুরেন্ট ব্যবসা পরিচালনা করছেন তিনি। দুবাইয়ে ‘শিহাব গ্রুপ’ নামে গড়ে তুলেছেন প্রাইভেট কার শোরুম ও আমদানি-রপ্তানি প্রতিষ্ঠান। আফ্রিকাতেও রয়েছে তাঁর নির্মাণ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
সামাজিক অবদান ও শিক্ষাবৃত্তি
শুধু ব্যবসায়িক সাফল্য নয়, সামাজিক উন্নয়নেও অবদান রাখছেন শিহাব আহমেদ।
হাতীবান্ধা ও পাটগ্রামে প্রায় ২৫ হাজার পরিবারকে বিশুদ্ধ পানির টিউবওয়েল উপহার দিয়েছেন নির্মাণ করেছেন ১,০০০ অজুখানা ও ১৫টি মসজিদ-মাদ্রাসা। দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষাবৃত্তি ও কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন। এসএসসি থেকে মাস্টার্স পর্যায় পর্যন্ত বর্তমানে ৮০ জন শিক্ষার্থী তাঁর বৃত্তি পাচ্ছে।
বুয়েটের শিক্ষার্থী মিরাজ বাবু বলেন, "২০২২ সাল থেকে আমি শিহাব আহমেদ ফাউন্ডেশনের বৃত্তি পাচ্ছি। এই সহায়তা ছাড়া আমার পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কঠিন হতো।”
নিজের লক্ষ্য সম্পর্কে শিহাব আহমেদ বলেন, "আমি চাই কোনো মেধাবী শিক্ষার্থী যেন টাকার অভাবে স্বপ্ন হারিয়ে না ফেলে। আমার সামর্থ্য অনুযায়ী সবসময় অসহায় মানুষের পাশে থাকব। আশা করি আমার সহায়তায় এগিয়ে আসা শিক্ষার্থীরাও ভবিষ্যতে অন্তত একজন করে দরিদ্র শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়াবে।”
নির্বাচনী অঙ্গীকার
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া প্রতিশ্রুতিতে শিহাব আহমেদ ঘোষণা দিয়েছেন- ২০৩০ সালের মধ্যে হাতীবান্ধা-পাটগ্রামে ৫,০০০ তরুণের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবেন। ২,০০০ তরুণকে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেবেন। দুই উপজেলাকে বেকারত্বমুক্ত ঘোষণা করবেন। এবং তিনি বলেন, নির্বাচিত হলে হাতীবান্ধা-পাটগ্রামের প্রতিটি ঘরে কর্মসংস্থানের আলো জ্বলবে ইনশাআল্লাহ।
রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন সমীকরণ
শিহাব আহমেদ এর স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। আপাতত এ আসনে স্বতন্ত্রসহ দুইজন সম্ভাব্য প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। ফলে হাতীবান্ধা-পাটগ্রাম আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা আরও তীব্র হবে বলে রাজনৈতিক মহলে ধারণা করা হচ্ছে।
মতামত