লাইফস্টাইল

পুরনো দলিল হারিয়ে গেলে কী করবেন?

পুরনো দলিল হারিয়ে গেলে কী করবেন?

প্রকাশিত : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, দুপুর ১:৩৫

জমি সম্পর্কিত বিরোধ বা আইনি জটিলতা মেটাতে পুরনো দলিলের প্রয়োজন অপরিসীম। কিন্তু ২০-৩০ বছর বা তারও বেশি পুরনো দলিল অনেক সময় দুর্ঘটনায় নষ্ট হয়ে যায়, হারিয়ে যায় বা সরকারি নথিপত্রে খুঁজে পাওয়া যায় না। এমন পরিস্থিতিতে কীভাবে পুরনো দলিল পুনরুদ্ধার করা সম্ভব, তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. আমির হামজা লিমন সম্প্রতি বিস্তারিত পরামর্শ দিয়েছেন।

আলিম্প্রতির আলাপচারিতায় অ্যাডভোকেট আমির হামজা লিমন বলেন, দলিল হারালে প্রথমেই সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে আবেদন করতে হবে। রেজিস্ট্রি অফিসের রেকর্ড থেকে সাব-রেজিস্ট্রারগণ পুরাতন দলিল শনাক্ত করে নকল (সার্টিফায়েড কপি) জারি করতে পারেন। যদি দলিল নম্বর জানা থাকে তখন অনুসন্ধান অনেক সহজ হয়; নম্বর না থাকলেও নাম, জমির ঠিকানা ও আনুমানিক রেজিস্ট্রেশনের সাল উল্লেখ করে তল্লাশি চালানো যায়। আবেদনকালে জাতীয় পরিচয়পত্র, জমির খতিয়ান, ট্যাক্স রসিদ কিংবা এলাকার নামজারির কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়।

তিনি আরও জানান, রেজিস্ট্রেশন আইন, ১৯০৮-এর বিভিন্ন ধারায় দলিল তল্লাশি ও কপি সংগ্রহ সংক্রান্ত বিধান আছে। আইন অনুযায়ী ৫৭(১) ধারায় নির্ধারিত ফি পরিশোধ সাপেক্ষে রেজিস্টার বহি (১ নম্বর ও ২ নম্বর) এবং সূচিবহি পরিদর্শন করা যায়; ৬২ ধারায় এই পরিদর্শনের ভিত্তিতে দলিলের সার্টিফায়েড কপি সংগ্রহের সুযোগ নিশ্চিত করা আছে। উইল বা অশিয়ত দলিলের ক্ষেত্রেও ৩ ও ৪ নম্বর বহির তথ্য অনুসন্ধান সম্ভব। যদি দলিল ৩ বা ৪ নম্বর বহিতে লিপিবদ্ধ থাকে, তাহলে তল্লাশি সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের মাধ্যমে করাই হবে — এ কথাও ৫৭(৪) ধারায় আছে।

তল্লাশির ফি ও পদ্ধতিও ব্যাখ্যা করেন তিনি। সাধারণত একটি নির্দিষ্ট বছরের জন্য তল্লাশি ফি ধরা হয় কম—উদাহরণস্বরূপ একটি বছরের তল্লাশি ফি ২০ টাকা এবং অতিরিক্ত বছরের জন্য প্রতি বছর ১৫ টাকা। রেজিস্টার বহির প্রতিটি পৃষ্ঠা পরিদর্শনের জন্য নির্দিষ্ট ফি থাকতে পারে (উদাহরণ: ১০ টাকা)। তবে একটি নির্দিষ্ট নাম বা সম্পত্তি সংক্রান্ত অনুসন্ধানের সর্বোচ্চ ফি সীমা সাধারনত ১৫০ টাকা নির্ধারিত আছে বলে জানান তিনি। উল্লেখ্য, এই ফি বিরূপতার সময় অনুকরণস্বরূপ উদাহরণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে; কাজেই সুনির্দিষ্ট ফি জানতে সংশ্লিষ্ট সাব-রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে যোগাযোগ করা উচিত।

দলিল উদ্ধার করার দুটি পরিস্থিতি থাকেঃ আপনার কাছে যদি মূল দলিল থেকে সম্পর্কিত রেজিস্ট্রি তথ্য (দলিল নম্বর, সাল, রেজিস্টার বই ও পাতা নম্বর) থাকে, তাহলে সরাসরি রেজিস্ট্রি অফিসে সেই তথ্য দেখিয়ে নকল সংগ্রহ করা যায় — এতে তল্লাশি প্রয়োজন হয় না। কিন্তু যদি আপনার কাছে কোন তথ্য না থাকে, তখন ‘সূচিবহি’ নামে রেজিস্ট্রি অফিসে থাকা দুই ধরনের সূচি — ক্রেতা/বিক্রেতার নাম অনুযায়ী সূচিপত্র এবং মৌজার নাম অনুযায়ী জমির বিবরণভিত্তিক সূচিপত্র — তল্লাশি করে দলিল শনাক্ত করতে হবে। তল্লাশি করে চিহ্নিত করা হলে সেই দলিলের নকল (সার্টিফায়েড কপি) সংগ্রহ করা সম্ভব।

অ্যাডভোকেট হামজা বিশেষভাবে বলেন, দলিল হারানো মানেই সব শেষ নয়। সঠিক প্রক্রিয়ায় আবেদন করলে পুরনো দলিল পুনরুদ্ধার করা যায়। তিনি আরও বলেন, যদি আবেদনকারীর কাছে নিবন্ধিত মূল দলিল বা उसका সত্যায়িত অনুলিপি থাকে, তাহলে তল্লাশি ফি না দিতে হয়; একইভাবে মামলা সংক্রান্ত নথিপত্র পরিদর্শনের জন্যও একবার ফি দিলে পর্যাপ্ত হতে পারে।

আদালত বা আইনি প্রক্রিয়ার প্রয়োজন হলে কিভাবে এগোবেন সে বিষয়ে তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি সাধারণ রেজিস্ট্রি তল্লাশি কাজে না লাগে বা রেকর্ড মেলেনা, তখন আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতের নির্দেশে সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রারকে রায় অনুযায়ী অনুসন্ধান বা সনদপত্র উত্তোলনের অনুরোধ করা যেতে পারে। মামলার প্রেক্ষিতে আদালত নথিপত্র পর্যালোচনার আদেশ দিলে বিষয়টি দ্রুত সমাধান পেতে সাহায্য করে।

শেষে অ্যাডভোকেট আমির হামজা লিমন সাধারণ জনগণকে পরামর্শ দিয়েছেন— পুরনো দলিল সংরক্ষণে যত্ন নিতে হবে এবং দলিল হারালে দ্রুত সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে গিয়ে নির্ধারিত নিয়ম মেনে আবেদন করতে হবে। উপযুক্ত যাচাই-বাছাই ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে দলিলের নকল পুনরুদ্ধার সম্ভব এবং আইনি ঝামেলা এড়ানো যায়।